৫ হাজার টাকায় শুরুঃ ব্যবসা এখন ৫০ কোটি ছাড়িয়ে!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

কিছু করো, না হয় মরো – এমন একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েক বছর আগেও। চারুকলা থেকে স্নাতক পাশ করার পরই পরিবার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু, নিজের আলাদা একটা পরিচয় তো বানাতে হবে, স্বপ্ন তো পূরণ করতে হবে। তাই পরিবারের কাছে এক বছর সময় চাইলেন। চাইলেন বললে ভুল বলা হবে, বলা ভাল ভিক্ষা করে একটা বছর নিলেন।

বাকিটা ইতিহাস। পরিশ্রম দিয়ে তিনি এখন সফল। তিনি হলেন সুপ্রিয়া সাবু। কোনো পুঁজি ছিল না, ছিল না ব্যবসায়িক কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা। কেবল, নিজের ভাগ্যটা পরীক্ষা করার আগে বিয়ে হয়ে যাওয়ার ভয় পেতেন। যাত্রা শুরু করেছিলেন মোটে পাঁচ হাজার রুপি নিয়ে, সেখান থেকে বানিয়েছেন ৫০ কোটি রুপির সাম্রাজ্য।

মাত্র ২২ বছর বয়সে সুপ্রিয়া নিজের বিজ্ঞাপনী সংস্থা খুলেছেন। শুরুতে পুঁজি ও সমর্থন ছিল না বললেই চলে। তার ওপর বাবার দেওয়া এক বছরের ডেডলাইন তো আছেই। সে সব চ্যালেঞ্জ, ডেডলাইন মুছে ফেলে সুপ্রিয়া এখন ইন্ডাস্ট্রির বড় নাম। ক্লায়েন্ট, বিনিয়োগকারীরা তাঁর পেছন পেছন ছোটে।

বছর ছকে আগে উদ্যোক্তা হিসেবে যাত্রা শুরু করেন সুপ্রিয়া। মানুষের অসহযোগীতামূলক আচরণ কিংবা রক্ষণশীলন নীতির কারণে বার বার হোঁচট খেতে হয় তাঁকে। কিন্তু, সুপ্রিয়া সব সময় ইতিবাচক ছিলেন। সততা আর পরিশ্রমই তাঁর নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে। ২০০৯ সালে সুপ্রিয়া নিজের প্রথম প্রতিষ্ঠান ‘মাস্টারস্ট্রোকস অ্যাডভার্টাইজিং’-এর যাত্রা শুরু করেন।

চারুকলায় ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকার সুবাদে সুপ্রিয়া সব সময়ই শৈল্পিক কিছু করার চিন্তা করতেন। নিজের জমানো পাঁচ হাজার রুপি দিয়েই শুরু হয় তাঁর প্রতিষ্ঠান। বয়স কম ছিল। ওই সময়ে একজন উদ্যোক্তার ব্যাংক লোন পাওয়ার কোনো শর্তই পূরণ করতে পারেননি সুপ্রিয়া। প্রোসেসিং ফি থেকে শুরু করে পার্সোনাল গ্যারান্টি বা রেফারেন্স – কিছুই তিনি দেখাতে পারেননি ব্যাংকে।

কাজের প্রতি একাগ্রতা দেখে এগিয়ে আসেন তাঁর বাবা। ধার হিসেবে কিছু অর্থ দেন। সাথে একটা শর্তও বেঁধে দেন। সফল হতে হলে এক বছরের মধ্যেই হতে হবে, এর পরে আর একদিনও নেই। আর ব্যর্থ হলেই সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর শুরু হল সুপ্রিয়ার আসল লড়াই। সুপ্রিয়ার বড় গুন হল তিনি ক্লায়েন্টরা কি চায় সেটা ধরতে পারেন, তাঁদের সাথে সমঝোতা করতে পারেন।

 

 

ফলে তাঁর কাছে বড় সব টেন্ডার আসা শুরু হল। প্রতিষ্ঠানটির অভিনব সব আইডিয়াতে মুগ্ধ হল বিনিয়োগকারীরা। একই সাথে নিজের কর্মীদের কাজ করার জন্যও দারুণ পরিবেশ সৃষ্টি করলেন। কাজের প্রতি সুপ্রিয়ার নিষ্ঠা দেখে বড় বড় ক্লায়েন্টরা আসা শুরু করলো।

সরকারী ওবেসরকারী খাতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস (এনএসজি), আএনএসএ, নিবসকম, হিটাচি, স্যামসং, ব্রাই-এয়ার (এশিয়া), অ্যাটলাস সাইকেল, রাঠি স্টিল বার্সের মত প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হল তাঁদের সাথে। সুপ্রিয়ার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া মার্কেটিং সলিউশনের মধ্যে আছে অ্যাডভারটাইজিং, গ্রাফিক, ওয়েব ডিজাইনিং, মার্কেটিং, আইডেন্টিটি ডেভেলপমেন্ট, করপোরেট প্রেজেন্টেশন, পোর্টাল ডিজাইনিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফটোশপ ইত্যাদি।

২০১২ সালে দিল্লীতে নিজের আলাদা ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন সুপ্রিয়া। তাঁর খাওগালিডিলসের উন্নতি এতটাই ভাল ছিল যে, এখন উত্তর ভারতের শীর্ষ ১৪ টি শহর থেকে বিনিয়োগকরারীরা এখানে অর্থ ঢালছেন। তাঁর এই উদ্যোগ ভারতের সেরা ছয়টি স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানের একটি। ২০১৬ সালে এসে সুপ্রিয়ার মোট ব্যবসায়িক সম্পদের পরিমান ৫০ কোটি রুপি। মাত্র সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে তিনি মাত্র পাঁচ হাজার রুপির পুঁজি নিয়ে এই সাম্রাজ্য গড়েছেন।

মনোযোগ, সততা আর পরিশ্রম থাকলে কি না হয়। আজকের দিনে কেবল নারীই নয়, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যও তিনি এক আদর্শের নাম। সুপ্রিয়া বলেন, ‘আমি শুধু একজন স্বাধীন নারী হতে চেয়েছিলাম, যে কি না নিজের ভরণপোষণের দায়ভার নিজের নিতে পারে, নিজের বিল নিজেই দিতে পারে। আমি সেটা হতে পেরেছি।’

Facebook Comments
error: Content is protected !!