কমবেশি সবারই প্রিয় পিঠার তালিকায় অবশ্যই পুলি পিঠা থাকবেই। তেলে ভেজে কিংবা সেদ্ধ করে নানা উপকরণ মিশিয়ে ভিন্ন স্বাদের রয়েছে নানা ধরণের পুলি পিঠা। তেমনি নারকেলের তিল পুলি, দুধপুলি, সেদ্ধপুলি, মুগের পুলি সহ বাহারি পুলি পিঠার রেসিপি নিয়েই আমাদের এই লেখা। শীতকাল চলে আসছে। আর এই শীতকাল মানেই পিঠাপুলির উৎসব। শহুরে অনেকেই আছেন যারা পুলি পিঠা খেতে পছন্দ করেন কিন্তু জানেন না কিভাবে সহজেই ঘরেই বানানো যায়। তাই তাদের কথা ভেবেই আজকের আয়োজন খুব সহজ ও মজাদার সুস্বাদু সব পুলি পিঠা বানানোর রেসিপি।
উপকরণঃ ভাজা তিলের গুঁড়া আধা কাপ, খেজুরের গুড় ১ কাপ, এক চিমটি এলাচ গুঁড়া, দারচিনি ২-৩টা, আতপ চালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি দেড় কাপ, লবণ স্বাদমতো, ভাজার জন্য তেল দুই কাপ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
কুরানো নারকেলে গুড় দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রান্না করতে হবে। একটু শক্ত হয়ে এলে এলাচ, তিল ও চালের গুঁড়া ছড়িয়ে আরও একটু রান্না করতে হবে। তেল উঠে পুর যখন পাকানোর মতো শক্ত হবে, তখন নামিয়ে ঠান্ডা করে লম্বাভাবে সব পুর বানিয়ে রাখতে হবে। এবার চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে ভালোভাবে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে হবে, যাতে খামিরে কোনো চাকা না থাকে।
একটু ঠান্ডা হলে পানি ছিটিয়ে ভালো করে ছেনে রুটি বানাতে হবে। রুটির এক কিনারে পুর রেখে বাঁকানো চাঁদের মতো উল্টে পিঠে আটকে দিতে হবে। এবার টিনের পাত অথবা পুলিপিঠা কাটার চাকতি দিয়ে কেটে নিতে হবে। কিনারে মুড়ি ভেঙে ও নকশা করা যায়। গরম তেলে মচমচে করে ভাজতে হবে।
উপকরণঃ আতপ চালের গুঁড়া ৪ কাপ, খেজুরের গুড় পরিমাণমতো, কোরানো নারকেল ২ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
আতপ চালের গুঁড়া হালকা ভেজে পরিমাণমতো পানি দিয়ে খামি করে নিন। কড়াইতে গুড় ও নারকেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। মিশ্রণটি শুকিয়ে আঠা আঠা করে নামিয়ে রাখুন। খামির হাতে নিয়ে গোল গোল করে বেলে মাঝখানে পুর দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারের আকার দিয়ে মুখটি বন্ধ করে দিন। এভাবে সব পুলি পিঠা বানিয়ে ভাপে সিদ্ধ করে গরম গরম পরিবেশন করুন। ঠাণ্ডা পুলি খাওয়ার মজাই আলাদা।
উপকরণঃ আড়াই কাপ চালের গুঁড়া, আধা কাপ ময়দা, দেড় কাপ পানি, আধা চা-চামচ লবণ, আধা চা-চামচ ঘি, দুধ দেড় কেজি, ১ কাপ চিনি (স্বাদ মতো), ১/৩ কাপ গুঁড়াদুধ (ইচ্ছা), ৪ টেবিল-চামচ কনডেন্সড মিল্ক, দেড় কাপ নারিকেল কুড়ানো, এলাচ ২,৩টি।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
পিঠার ভেতরে পুরের জন্য দেড় কাপ নারিকেল কুড়ানো (সামান্য রেখে দিতে হবে পরে দুধের মধ্যে দেওয়ার জন্য)। এখন বাকি নারিকেলের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় চামচ চিনি দিয়ে ফ্রাইপ্যানে সাত থেকে আট মিনিট ভেজে নিতে হবে (নারিকেলের পানি শুকাতে যতক্ষণ লাগে) এই পুর পিঠার ভেতরে দিতে হবে।
দুধের সঙ্গে গুঁড়াদুধ, চিনি, কনডেন্সড মিল্ক আর এলাচ মিশিয়ে জ্বাল দিন। পিঠা বানানো হতে হতে দুধ খুব সুন্দর জ্বাল হয়ে হালকা রং হবে। অন্য পাতিলে পানির সঙ্গে লবণ এবং ঘি দিয়ে গরম করুন। ফুটানো পানির সঙ্গে চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে চুলা বন্ধ করে দিয়ে খামির করতে হবে। রুটি বানানোর পিঁড়িতে গরম গরম খামির খুব ভালো করে মথে নিন।
এখন খামিরটা ১০ ভাগ করুন। এক একটি ভাগ দিয়ে ছোট ছোট রুটি বেলে অথবা হাত দিয়ে চেপে পাতলা করে ভিতরে নারিকেলর পুর দিয়ে পুলিপিঠা তৈরি করুন। এভাবে সব পিঠাগুলো তৈরি করে নিন। এখন বানানো পুলিপিঠা, ফুটিয়ে রাখা দুধের মধ্যে দিয়ে চুলার আঁচ কম রেখে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে।
হাঁড়ি আস্তে ঝাঁকিয়ে পিঠার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে নিন। ১০ মিনিট রান্নার পর কুড়ানো নারিকেল দিয়ে আরও দুই থেকে তিন মিনিট রান্না করে নামিয়ে পাত্রে ঢেলে পরিবেশন করুন মজাদার দুধ পুলি পিঠা।
উপকরণঃ নারকেল ১টি, চালের গুঁড়া আধা কেজি, চিনি ১ কাপ, ময়দা সোয়া কাপ, পানি ১ কাপ, লবণ স্বাদমতো, তেল পরিমান মতো৷
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে নারকেল কুড়িয়ে নিন। এবার কড়াইয়ে নারকেল ও চিনি এক সঙ্গে দিয়ে পুর তৈরি করে নিন। এবার পানি ফুটিয়ে চালের গুঁড়া ও ময়দা দিয়ে খামির তৈরি করে নিন। চালের গুঁড়া সিদ্ধ হলে নামিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এবার ছোট ছোট লেচি কেটে পুর ভরে মুখ বন্ধ করে পুলি বানিয়ে নিন। বানানো হয়ে গেলে কড়াইয়ে তেল গরম করে ডুবো তেলে ভাজুন।
উপকরণঃ ভাজা মুগ ডাল – ১ পোয়া, নারিকেল কুরানো – ২ কাপ, ময়দা – ১ কাপ, চিনি – ৩ পোয়া লবণ ও সয়াবিনের তেল পরিমান মত।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে মুগের ডাল গরম পানিতে সিদ্ধ করে পাটায় বেটে নিন। এবার দেড় পোয়া চিনিতে ৩/৪ কাপ পানি দিয়ে সিরা করে নিন। তারপর নারিকেল ও বাকি চিনি মিশিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকুন। ঘন ও আঁঠালো হয়ে আসলে চুলা থেকে পাত্রটি নামিয়ে ফেলুন।
এরপর ময়দা ও ২ টেবিল চামচ তেল দিয়ে ময়ান বানিয়ে নিন। ময়দার সাথে ১/৪ ভাগ পানি ও সিদ্ধ ডাল দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে নিন। ২০-২৫ ভাগ করে প্রত্যেক ভাগে নারিকেলের পুর দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিন। এবার ডুবো তেলে ভেজে চিনির সিরায় চুবিয়ে পরিবেশন করুন।
উপকরণঃ নারকেল – ৩ টি, চিনি – ৩ পোয়া, গুড় – আধা কেজি, ময়দা – ১ কেজি, দুধ – ২ কেজি, তেল – পরিমান মত।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে নারিকেল মিহি করে কুরে নিন। কুরানো অর্ধেক নারিকেল আবার শিল পাটায় আর ও মিহি করে বেটে নিন। বাকি অর্ধেক নারিকেলের সঙ্গে গুড় জ্বাল দিয়ে হালুয়ার মত করে পুর বানিয়ে নিন। হালুয়া শুকিয়ে চটচটে হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। এবার একটি পাত্রে ঘন করে দুধ জ্বাল দিয়ে নিন।
তারপর পাটায় মিহি করা নারিকেল ও চিনি মিশিয়ে ময়দা দিয়ে কাই করে নিন। এরপর রুটি বেলে নারিকেলের পুর ভরে বাঁশের চটা বা ছুড়ি দিয়ে অর্ধচন্দ্রাকারে কেটে নিন। চন্দ্রপুলি ডুবো তেলে ভাল করে ভেজে নিন। গরম গরম এই মজাদার ও সুস্বাদু চন্দ্রপুলি পরিবারে পরিবেশন করুন।
উপকরণঃ চালের গুঁড়ো ৪ কাপ, মাংস ১ কাপ (কিমা), চিংড়ি মাছ আধা কাপ, ফুলকপি কুচি ১ কাপ, আদা বাটা আধা চা চামচ, পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ বাটা ১ চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়ো আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালীঃ
চালের গুঁড়ো গরম পানিতে পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ডো তৈরি করে নিতে হবে। কড়াইয়ে তেলে পেঁয়াজ কুচি বাদামি করে ভেজে আদা বাটা, মরিচ বাটা, মাংসের কিমা, চিংড়ি ও অল্প পানি দিয়ে কষাতে থাকুন। মাঝারি আঁচে রান্না করতে হবে।
পানি শুকিয়ে গেলে ফুলকপি কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রান্না করতে হবে। তেল উপরে উঠলে গরম মসলা দিয়ে ভাজা ভাজা করে কষিয়ে নামাতে হবে। পুলি পিঠার আকৃতিতে পুর ভরে পিঠা বানিয়ে নিন। এবার একটা হাঁড়িতে পানি দিয়ে স্টিলের জালি বসিয়ে দিন। পানিতে ভাপ এলে একটা পাতলা সাদা কাপড় বিছিয়ে ভাপানোর জন্য পিঠা দিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভাপালে পিঠা খাওয়ার উপযোগী হবে। এবার নামিয়ে চাটনি বা সস দিয়ে পরিবেশন করুন মজার স্বাদের ফুলকপি ভাপা পুলি।
—
তো আপনার সময় মতো পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধবদের জন্যে তৈরি করে ফেলুন মজাদার সব পুলিপিঠা। আপনার জানা আরও কোন পুলি পিঠার রেসিপি জানা থাকলে শেয়ার করুণ আমাদের সাথে মন্তব্যের ঘরে। শীতের সব মজাদার পিঠার রেসিপি দেখতে চাইলে পড়ে নিন এখনি –