বাসা-বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে আমরা প্রায়ই একটা কনফিউশনে পরি। অনেক সময় আমরা বিদ্যুৎ বিল বিভ্রাটে পরে থাকি। মনে রাখবেন আধুনিক মিটারিং সিস্টেমে আপনার বিল নিয়ে কোন বিভ্রাটের সুযোগ নেই। আপনি যতটুকু ব্যবহার করবেন আপনার বিলে ঠিক ততটুকুই আসার কথা যদি না আপনার মিটার রিডিং ঠিকমত তোলা হয় অথবা আপনার মিটারে যদি কোন গন্ডগোল না থাকে। তারপরেও জেনে রাখা ভাল আপনার বিদ্যুৎ বিল হিসাব কিভাবে তৈরি হচ্ছে। ব্যাপারটি আসলে খুবই সহজ, ক্লাস এইট/নাইনের ছাত্ররাও এই হিসাব সহজেই করতে পারবে।
বাসা-বাড়ির বিদ্যুৎ বিলে কয়েকটি স্লাব থাকে, স্লাবগুলো আগে জেনে নেওয়া যাক।যদি আপনার বিল ৫০ ইউনিট এর বেশি না হয় তাহলে ৫০ ইউনিট এর বিল হবে ৩.৭৫ টাকা হারে। আপনার মাসিক বিল যদি ৫০ ইউনিটের বেশি হয় তাহলে নিচের স্লাব অনুযায়ি বিল হিসাব হবে।
১লা মার্চ, ২০২০ থেকে এই নতুন ট্যারিফ হার কার্যকর হয়েছে। সূত্রঃ ডিপিডিসি ওয়েব সাইট।
নেট বিল = এনার্জি বিল+ মিটার বিল
এনার্জি বিল = পুরা মাসে ব্যবহৃত মোট ইউনিট (kWh) X ইউনিট প্রতি মূল্য (উপরে দেয়া আছে)
মিটার বিল = ডিমান্ড চার্জ + সার্ভিস চার্জ
ডিমান্ড চার্জ = ১৫ টাকা প্রতি কিলোওয়াট
সার্ভিস চার্জ = সিঙ্গেল ফেস ১০ টাকা, ৩০ টাকা থ্রি ফেস
ভ্যাট = নেট বিলের ৫% ।
সময়মত বিল না পরিশোধ না করলে জরিমানা = নেট বিলের ৫% ।
১ kWh= ১ ইউনিট ( kWh = কিলোওয়াট আওয়ার )
১ hp= ৭৪৬ ওয়াট ( hp = হর্স পাওয়ার )
১০০০ W= ১ kW ( W= ওয়াট, kW = কিলোওয়াট )
h = সময়ের একক ঘন্টা ( h = আওয়ার )
১ মাস = ৩০ কিংবা ৩১ দিন ( যে মাসে হিসাব করবেন )
১। লাইট ২৫ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ৫ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ৫ ঘন্টা।
২। সিলিং ফ্যান ৮০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ৩ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ১২ ঘন্টা।
৩। টেলিভিশন এলইডি ৫০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ৪ ঘন্টা।
৪। ল্যাপটপ ৫০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ৪ ঘন্টা।
৫। রেফ্রিজারেটর ১৫০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ১২ ঘন্টা।
৬। এয়ার কন্ডিশনার ১৮০০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ৮ ঘন্টা।
৭। আয়রন ১০০০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ০.৫ ঘন্টা বা ৩০ মিনিট।
৮। ওয়াসিং মেশিন ৫০০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ১ ঘন্টা
৯। মাইক্রোওভেন ১৫০০ ওয়াট প্রতিটি, আপনার বাসায় আছে ১ টি, দৈনিক ব্যবহার গড়ে ০.০৮ ঘন্টা বা ৫ মিনিট।
১। লাইট = ২৫ ওয়াট X ৭টি X ৬ ঘন্টা X ৩০ দিন= ১৮,৭৫০ ওয়াট-ঘন্টা।
২। সিলিং ফ্যান = ৮০ ওয়াট X ৩টি X ১২ ঘন্টা X ৩০ দিন = ৮৬,৪০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৩। এলইডি টেলিভিশন = ৫০ ওয়াট X ১টি X ৪ ঘন্টা X ৩০ দিন= ৬,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৪। ল্যাপটপ = ৫০ ওয়াট X ১টি X ৪ ঘন্টা X ৩০ দিন= ৬,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৫। রেফ্রিজারেটর = ১৫০ ওয়াট X ১টি X ১২ ঘন্টা X ৩০ দিন= ৫৪,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৬। এয়ার কন্ডিশনার = ১৮০০ ওয়াট X ১টি X ৮ ঘন্টা X ৩০ দিন= ৪৩২,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৭। আয়রন = ১০০০ ওয়াট X ১টি X ০.৫০ ঘন্টা X ৩০ দিন= ১৫,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৮। ওয়াসিং মেশিন = ৫০০ওয়াট X ১টি X ১ ঘন্টা X ৩০ দিন= ১৫,০০০ ওয়াট-ঘন্টা।
৯। মাইক্রোওভেন = ১৫০০ওয়াট X ১টি X ০.০৮ ঘন্টা X ৩০ দিন= ৩,৬০০ ওয়াট-ঘন্টা।
সর্বমোট লোড= ৬৩৬৭৫০ ওয়াট-ঘন্টা = ৬৩৬৭৫০ ওয়াট-ঘন্টা/ ১০০০= ৬৩৬.৭৫ kWh কিলোওয়াট-ঘন্টা কিংবা ৬৩৬.৭৫ ইউনিট বিল।
বর্তমান ট্যারিফ প্লান স্লাব অনুযায়ি এনার্জি বিল = ৭৫ X ৪.১৯ + ১২৫ X ৫.৭২ + ১০০ X ৬ + ১০০ X ৬.৩৪ + ২০০ X ৯.৯৪ + ৩৬.৭৫ X ১১.৪৬ = ৪,৬৭২.৪১ টাকা
এর সাথে, চার্জ = ২১০ টাকা সহ মোট= ৪,৮৮২.৪১ টাকা (থ্রি ফেস লাইনে ২১০ টাকা )
ভ্যাট ৫% = ২৪৪.১২ টাকা
তাহলে, ভ্যাট ৫% আপনার সর্বমোট বিল দিতে হবে= ৫,১২৬.৫৩ টাকা
এটা আপনার বিলের একটা গড় হিসাব, আপনি চাইলে আপনার ব্যবহৃত যন্ত্রাদির ব্যবহার কম বেশি করে বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেন। যেমন আপনার কিচেন কিংবা টয়লেটে কম ওয়াটের লাইট ব্যবহার করে কিংবা এয়ার কন্ডিশনার এর তাপমাত্রা বাড়িয়ে রেখে অথবা যখন রুমে থাকবেননা তখন রুমের লাইট/ফ্যান বন্ধ রেখে। বিদ্যুৎ বিল হিসাব করাটা আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন। হোমপেইজে গিয়ে আরও নতুন ব্লগ পড়ুন।