মানজুমা মোরশেদ, বন্দরনগরী চট্টগ্রামের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। চট্টগ্রাম থেকেই নারীর ক্ষমতায়নে ও শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন তিনি। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে যেমন সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যেতেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন।মানজুমা চট্টগ্রামের এমঅ্যান্ডএম বিজনেস কমিউনিকেশন এবং এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন ও এডমিশন কনসালটিং ফার্ম ‘মেন্টরস’ চট্টগ্রামের ফ্রেঞ্চাইজি-র স্বত্তাধিকারী। এছাড়াও তিনি মালয়েশিয়াতে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘উইনিং ম্যাগনিটিউড বাংলাদেশ’-র কান্ট্রি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানজুমা মোরশেদ বলেছেন তার সাফল্যের গল্প।
চিকিৎসক বাবার চাকরি সূত্রে মানজুমা মোরশেদের শৈশব কৈশোর কেটেছে পারস্য উপসাগরের দেশ ইরানে। সেখানে শিক্ষা জীবনের শুরু হলেও ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্ব-পরিবারে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এরপর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট শহীদ আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাসের পর চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী শামিম মজুমদারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরবর্তীতে তার উচ্চশিক্ষা ও বাণিজ্যিক সাফল্য রচিত হয় এখান থেকেই।
মানজুমা মোরশেদ জানান, বিয়ের পর ২০০১ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে সোশ্যাল সাইন্সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার অর্জন মধ্য দিয়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম ইউএসটিসি থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে স্টান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে ইন্টার্নি এবং ব্র্যাক ব্যাংকে চাকরির মধ্য দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
মানজুমা আরও জানান, ব্র্যাক ব্যাংকে যখন চাকরি শুরু করেন তখন তার একমাত্র সন্তান সেজাদের জন্ম হয়। সন্তানের দেখভালের পাশাপাশি ব্যাংকের চাকরি মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। ফলে চাকরিটা ছেড়ে দেন। কিন্তু চাকরি ছাড়লেও নিজের মেধা ও মনের ইচ্ছাশক্তিকে সক্রিয় রেখেছেন জীবনের প্রতিটি ধাপে। এর ফলশ্রুতিতে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন-এ অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর (এডমিশন) হিসেবে যোগদান করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। টানা ৬ বছর দায়িত্ব পালন করার পর ডিরেক্টর (নেটওয়ার্ক অ্যান্ড প্লেসমেন্ট) হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি ও এডুকেশন সেক্টরে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে দাঁড় করানোর ইচ্ছে নিয়ে ২০১৬ সালে চাকরি ছাড়েন। ব্যবসায়ী স্বামীর উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের সহজে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দিতে এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন এবং এডমিশন কনসালটিং ফার্ম ‘মেন্টরস’ ফ্রেঞ্চাইজি প্রতিষ্ঠা করেন। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘উইনিং ম্যাগনিটিউড বাংলাদেশ’-র কান্ট্রি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতি বছর মালয়েশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউকে এবং ইউএসএ-তে অন্তত ৭০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
তিনি জানান, এডুকেশন সেক্টরে দুটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার পাশাপাশি ২০১৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এমঅ্যান্ডএম বিজনেস কমিউনিকেশন। যার মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিজনেস প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, একটি দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে নারী শিক্ষা ও নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিকল্প নেই। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে এমঅ্যান্ডএম বিজনেস কমিউনিকেশন। ২০১৭ সাল থেকেই চট্টগ্রামের পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু ভিউতে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এক্সিভিশনের আয়োজন করে আসছে। এরমধ্যে রয়েছে উইমেন এমপাওয়ামেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ, উইন্টার এক্সপো, উইন্টার এক্সিভিশন, প্রি-ঈদ এক্সিভিশনসহ নানা আয়োজন। এসব এক্সিভিশনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বাইরের নারী উদ্যোক্তা, খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনাররাও অংশ নেন। এছাড়া অনলাইন বিজনেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসার উন্নয়ন ও সরাসরি জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে বিশেষ সুযোগ করে দেওয়া হয়। এর ফলে নারী উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য ও সেবা নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পান।
আগামী দিনগুলোতেও নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার স্বপ্নের কথা জানান মানজুমা। পাশাপাশি এডুকেশন সেক্টরেও কাজের পরিধি আরও বৃদ্ধি করে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে চান তিনি।