অনলাইন বিজনেস শুরুর আগে যে ৫টি কাজ করা দরকার

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পরে অনেক কিছুই গুছিয়ে আনা যায়। সেজন্য নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করতে কী কী লাগে, সেই সম্পর্কে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরও ধারণা নেই। কিন্তু ব্যবসা শুরুর আগেই জরুরি কিছু কাজ সেরে ফেলা দরকার।

যেমন, পুরোদমে ব্যবসা শুরুর আগেই সম্ভাব্য যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য সতর্ক থাকার পাশাপাশি ব্যাপক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ দরকার। এই ধরনের কিছু পদক্ষেপের ওপরেই ভবিষ্যতে ব্যবসার সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে।

আবার যেহেতু অনলাইন বিজনেসের ক্ষেত্রে আলাদা ধরনের সমস্যা ও বাধাবিপত্তি রয়েছে, তাই এই ধরনের ব্যবসা শুরুর আগে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার গুরুত্বটাও বেশি। এবার ঠিক তেমন ৫টি পদক্ষেপ নিয়েই আলোচনা করা যাক।
.
#১. ভবিষ্যৎ নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করা
যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রেই প্রথম বছরটা সবচেয়ে কঠিন সময়। তাই আগে থেকেই প্রথম বছরের জন্য বিজনেস প্ল্যান করে রাখা উচিৎ। পাশাপাশি প্রথম ৫ বছরের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও করে রাখতে পারেন।
ব্যবসা নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলির একটা হচ্ছে—প্রথম কয়েক বছরের মধ্যেই বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্মল বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মতে, প্রথম দুই বছরে মাত্র ৩০% ব্যবসার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এবং প্রথম ৫ বছরের মধ্যে ৫০% প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়।
তাই প্রথম দুই বছরের প্ল্যানের মধ্য দিয়ে আপনার ব্যবসায় ইতিবাচক ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। সেজন্যে যা যা করতে হবে তার একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন। যেমন, প্রতি ৩ মাসের জন্য আয়ের লক্ষ্য ঠিক করুন। আবার, ৫ বছরের প্ল্যানে বার্ষিক বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
তবে এমনভাবে পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে করে একবার ব্যবসা শুরু করার পরে সেই প্ল্যান রিভিশন বা সংশোধনের সুযোগ থাকে।
.


#২. প্রাথমিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা
যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর পাশাপাশি ব্যবসায় সফল হতে হলে সময় অনুসারে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
যদি দীর্ঘ সময় আপনি পরিকল্পনার ধাপেই আটকে থাকেন, তাহলে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে করতেই অনেক সময় নষ্ট হবে। এভাবে আপনার প্ল্যান বা পরিকল্পনার কোনো দৃশ্যমান ফলাফল দেখতে পাবেন না।

তাই ব্যবসা শুরুর আগেই কার্যকর ও সুস্পষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। খেয়াল রাখতে হবে, পরিকল্পনা অনুসারেই যেন এসব পদক্ষেপ হাতে নেন। একই সঙ্গে এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে যাতে নতুন কোনো জটিলতা তৈরি না হয়।

যেমন সরকারি নথিতে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম রেজিস্টার করা। এছাড়া ওয়েবসাইট তৈরি, ব্যবসার নামের সাথে মিল রেখে ডোমেইন কিনে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে হোস্টিং প্রোভাইডার খুঁজে নিয়ে আপনার ওয়েরসাইট তৈরির কাজ শুরু করতে পারবেন।
.
#৩. অনলাইনে মার্কেটিং-এর কৌশল পরিকল্পনা করে রাখা
মার্কেটিং বা প্রচারের পেছনে বিনিয়োগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এছাড়া গ্রাহকরা তাদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সহজে জানতেই পারবে না।

এমন একটা মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি বা কৌশল তৈরি করতে হবে, যাতে সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মতো সব ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হতে পারে। এর মাধ্যমে আপনি নিজের টার্গেট অডিয়েন্সের মনস্তত্ত্ব বুঝতে পারবেন। একই সাথে বিজ্ঞাপন পৌঁছানোর জন্য তাদেরকে কোথায় পাওয়া যাবে, সে ধারণাও পাবেন।

পাশাপাশি, যথাযথ মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে পারলে মার্কেটিংয়ের পেছনে কত খরচ হতে পারে, সে সম্পর্কে মোটামুটি ধারণাও তৈরি হবে আপনার। ফলে সেসব কৌশল প্রয়োগ করতে হলে কী পরিমাণ টাকা জোগাড় করতে হবে, তাও বুঝতে পারবেন।


.
#৪. ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করা
সব ধরনের ব্যবসা শুরু করার জন্যই প্রাথমিকভাবে ফান্ড বা পুঁজির প্রয়োজন হয়। অবশ্য অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম পুঁজির প্রয়োজন হলেও সেক্ষেত্রে আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করে ফান্ড সংগ্রহ করে রাখা ভালো।

ব্যবসার শুরুর দিকেই ফান্ডিংয়ের জন্য মোট অর্থের পরিমাণ ঠিক করে ফেলুন। তারপরই ব্যবসায় আর্থিক ভারসাম্য আনতে কত টাকা আয় করতে হবে, সেটা হিসাব করুন। এর মাধ্যমে প্রোডাক্টের দাম নির্ধারণের ব্যাপারেও ভালো ধারণা পাবেন।

যথাযথ আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করার পরই আপনাকে ফান্ডিং এর জন্য খোঁজখবর নেয়া শুরু করতে হবে। সেই ফান্ড কীভাবে সংগ্রহ করতে করবেন, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।
প্রাথমিকভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার মাধ্যমে ব্যবসার জন্য ফান্ড সংগ্রহ করতে পারেন।
.
#৫. সার্ভিস দিয়ে শুরু করে প্রোডাক্ট উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দেয়া
গ্রাহকদেরকে সার্ভিস দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসা শুরুর কথা ভাবুন। এরপর ধীরে ধীরে পণ্য বা প্রোডাক্ট উৎপাদনের দিকে এগিয়ে যান। সার্ভিস কেন্দ্রিক ব্যবসা গড়তে তুলতে বিনিয়োগ কম লাগে। এছাড়া পণ্য বা প্রোডাক্ট কেন্দ্রিক ব্যবসার চাইতে কম সময়ে গড়ে তোলা যায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান।
যে প্রোডাক্ট নিয়েই ব্যবসা করুন না কেন, পরিকল্পনার গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রথমত কাঁচামাল যাতে ফুরিয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা যায়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিনিয়োগের ব্যাপারটাও মাথায় থাকে।


.
* * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * ** * *
ওপরের কাজগুলি শেষ করার পরই শুরু হবে পরিকল্পনাকে কাজে রূপান্তর করার পর্যায়। এভাবে ব্যবসা এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আপনি প্রথম দিকে নেয়া পদক্ষেপগুলির দিকে ফিরে তাকাতে পারবেন।
সে সময়ে যেসব ভুল হয়েছে, সেগুলি সংশোধন করে নতুন করে অনেক কিছুই সংশোধন করতে পারবেন। যার মাধ্যমে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠার দিতে আপনি আরো একধাপ এগিয়ে যাবেন।
#অনলাইনে #বিজনেস

Facebook Comments
error: Content is protected !!