আপনার কি চশমার প্রয়োজন? বুঝবেন কী ক‍রে? কী বলছেন চিকিৎসক

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সুস্থ বা সঠিক দৃষ্টি কাকে বলে?
স্নেলেন্স চার্টের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টিক্ষমতা যাচাই করা হয়। এই চার্টে অনেকগুলি লাইনে ক্রমহ্রাসমান আকারে কিছু অক্ষর সাজানো থাকে। 6 মিটার দূর থেকে সপ্তমসারি অক্ষরগুলি স্পষ্ট ভাবে পড়তে পারলে দৃষ্টিক্ষমতাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। ডাক্তারি ভাষায় একে বলা হয় 6/6 দৃষ্টি।

চশমা কেন পরতে হবে?
নানা কারণে অনেকের দূরে বা কাছে ভালোভাবে দেখতে পারেন না। একে দৃষ্টিবিভ্রম বা Refractive error বলা হয়। নির্দিষ্ট পাওয়ারের উত্তল বা অবতল লেন্সের চশমা পরলে তবেই আবার সবকিছু ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া চশমা না পরলে মাথা ও চোখে ব্যাথা, চোখের ক্লান্তি, চোখ থেকে জল পড়া ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

কিভাবে বুঝব আমার চশমা লাগবে?
যখন দূরের জিনিস যেমন টিভি, বাসের নম্বর, ক্লাসের বোর্ড ইত্যাদি ভালোভাবে দেখা যায় না তখনই বুঝতে হবে আপনার চশমা লাগবে। বই পড়তে, কম্পিউটারে কাজ করতে বা ড্রাইভ করতে অসুবিধা হলেও চশমা লাগে। মাথাব্যথা, চোখের ক্লান্তিতেও চশমার প্রয়োজন হয়।

চশমা না পরলে কি হবে?
বাড়ন্ত বাচ্চারা চশমা না পরলে দৃষ্টির সম্পূর্ণ বিকাশ হবেনা। বড়দের ক্ষেত্রে দেখতে অসুবিধা ছাড়াও মাথাব্যাথা, ডবল-ভিশন, চোখের ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেবে।

নতুন চশমাটা ঠিকমত বানানো হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝব?
নতুন চশমা পরে মাথাব্যাথা, বমিভাব বা ঝাপসা দেখলে বুঝতে হবে হয় প্রেসক্রিপশনে ভুল আছে নতুবা চশমা তৈরিতে ত্রুটি হয়েছে।

পাওয়ার ছাড়া চশমা পরা কি চোখের পক্ষে ক্ষতিকর?
বিশেষ আবরণ-যুক্ত পাওয়ার ছাড়া চশমা ধুলোবালি, হাওয়া ইত্যাদি থেকে চোখকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখটিকে সুরক্ষিত রাখে।

চশমা পরলে কি আমাকে স্মার্ট দেখাব?
অবশ্যই। পরিসংখানে দেখা গিয়েছে চশমা-পরা লোকেদের অনেক Intellectual বা বুদ্ধিদীপ্ত দেখায়। তাছাড়া বর্তমানে চশমাকে ফ্যাশান দুনিয়ার অন্যতম উপকরণ হিসাবে গণ্য করা হয়।

কত বছর বয়সের পরে চশমার পাওয়ার আর বাড়ে না?
চোখের পাওয়ার একটু একটু করে বেড়ে সাধারণত ২০-২১ বছর বয়সে থিতু হয়। কিন্তু বেশী মায়োপিয়া বা মাইনাস পাওয়ারের ক্ষেত্রে এর পরেও চশমার পাওয়ার বাড়তে পারে।

রিমলেস চশমা পরা কি ভালো?
রিমলেস চশমা এতই হালকা যে মুখে কোনো রকম চাপ পড়েনা বা দাগও হয়না। তাছাড়া এতে মুখের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে যায়। তবে রিমলেস চশমা মুখের সঙ্গে ঠিকমত ফিট না করলে দেখবার সমস্যা হতে পারে।

চশমার পাওয়ার কতদিন অন্তর বদলাতে হয়?
২০ বছর বয়স পর্যন্ত বছরে কমপক্ষে একবার, ২০-৪০ প্রয়োজনমত, ৪০-৬০ দেড় থেকে দুবছর, ৬০ বছরের পরে দুই থেকে তিন বছর। তবে চোখে অন্য সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চশমার পাওয়ার বদলাতে হয়।

চশমার ফ্রেমও কি মাঝে মাঝে বদলাতে হবে?
উন্নতমানের চশমার ফ্রেম প্রায় ১০ বছর ব্যবহার করা যায়। তবে সস্তা ফ্রেমগুলি বেশীদিন টেঁকে না। সুতরাং পুরোনো ফ্রেমে নতুন কাঁচ লাগালে কোনো ক্ষতি নেই।

চশমার ফ্রেম থেকে কি অ্যালার্জি হতে পারে?
অনেকেরই ফ্রেমের উপাদান, আবরণ, পালিশের রাসায়নিক থেকে চোখের চারপাশে, নাকে ও কানে অ্যালার্জি হয় যা ভীষণ বিরক্তকর। সেক্ষেত্রে চশমার ফ্রেমটি বদলিয়ে নেওয়া দরকার। আজকাল অ্যালার্জি প্রতিরোধক ফ্রেমও পাইয়া যায়।

চশমা সবসময় পরে থাকলে কি চোখ ভালো হয়ে যাবে?
চশমা সবসময়ে পরে থাকলে দেখার সমস্যাটা মিটবে, কিন্তু যে কারণে চশমার প্রয়োজন হচ্ছে সেটার সমাধান হবেনা। আপনার ডাক্তারই বলে দেবেন সারাদিনে কতক্ষণ চশমা পরতে হবে।

ঘুমানোর সময়েও কি চশমা পরতে হবে?
ঘুমানোর সময়ে চশমা পরবার কোনো প্রয়োজন নেই।

চশমার যত্ন কিভাবে করতে হয়?
ধুলো আর আদ্রতা চশমার আসল শত্রু। যেকোনো কাপড় দিয়ে চশমা পরিষ্কার করবেন না। পকেটে বা যেখানে সেখানে রাখবেন না। ঠাণ্ডা জল দিয়ে প্রতিদিন চশমাটি ধুয়ে নিতে হবে।

চশমা কি বংশগত সমস্যা?
মায়োপিয়া বা মাইনাস পাওয়ারের সঙ্গে কিছুটা বংশগত সম্পর্কে আছে। বাব-মা কিম্বা পরিবারের সদস্যদের চশমা থাকলে সন্তানদেরও চোখে চশমার প্রয়োজন হতে পারে।

চালশের ক্ষেত্রে বাইফোকাল না প্রোগ্রেসিভ কোনটা ভালো?
দুটো কাঁচ থাকায় বাইফোকাল চশমায় দূরে এবং কাছে দেখা গেলেও মাঝামাঝি দূরত্বের কোনোকিছু ভালোভাবে দেখা যায়না। প্রোগ্রেসিভ চশমা বিভিন্ন পাওয়ারের অসংখ্য কাঁচ থাকে, তাই যেকোনো দূরত্বের বস্তুকে স্পষ্ট দেখা যায়। এজন্য আজকাল প্রোগ্রেসিভ চশমা বেশী জনপ্রিয়।

কি ধরণের সানগ্লাস চোখের পক্ষে উপকারি?
সানগ্লাসের লেন্সটি ১০০ শতাংশ আল্ট্রাভায়োলেট প্রতিরোধক এবং আকারে একটু বড় হওয়া দরকার। দৈনন্দিন কাজের জন্য ধূসর, বাদামী বা সবুজ লেন্স বেশি আরামদায়ক। সস্তা বা সাধারণ সানগ্লাসের চাইতে ভালো ব্রাণ্ডের সানগ্লাস চোখের পক্ষে অনেক নিরাপদ।

ফটোক্রোমাটিক চশমায় কি চোখের আরাম হয়?
ফটোক্রোমাটিক চশমা সূর্যের আলোয় প্রয়োজনমত ধূসর বা কালো হয়ে চোখে প্রবিষ্ট আলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে উজ্জ্বল আলোতেও সবকিছুকে স্নিগ্ধ ও আরামদায়কভাবে দেখা সম্ভব।

কম্পিউটারে কাজ করতে কোন লেন্স চোখের পক্ষে ভালো?
কম্পিউটার কাজের চশমায় অ্যান্টিরিফ্লেকশন এবং Blue-ray প্রতিরোধক কোটিং থাকা দরকার। আর চালশের ক্ষেত্রে প্রোগ্রেসিভ লেন্সের চশমায় অনেক ভালোভাবে কাজ করা যায়।

ক্রিজাল লেন্স কি সবচেয়ে ভালো?
Crizal কোনও লেন্স নয়, এটি এক বিশেষ Anti-Reflection কোটিং যা যেকোন Brand এর লেন্সের উপরে লাগানো যায়। এই কোটিং লেন্সকে মসৃণ রাখে, Glare কমায়, লেন্সের উপরে ধূলোবালি বা জলের ছিটের দাগ বসতে দেয় না।

অ্যান্টিস্ক্রাচ কোটিং কি সত্যিই কাজের?
অনেকে অভ্যাসবসত জামাপ্যান্টের পকেটে, হাতব্যাগে বা নানা জায়গায় অবহেলায় ফেলে রাখেন। এর ফলে লেন্সের উপরে স্ক্রাচ বা দাগ পড়ে। অ্যান্টিস্ক্রাচ কোটিং চশমার বাইরের আঘাত, ধুলোবালি ইত্যাদি থেকে লেন্সকে রক্ষা করে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই কোটিং খুব তাড়াতাড়িই খারাপ হয়ে যায়।

On-line চশমায় কি সুবিধা পাওয়া যায়?
দোকানের ভীড়ে সময় নষ্ট না করে আজকাল অনেকেই On-line-এ ঘরে বসেই চশমা বানিয়ে নিতে ভালোবাসেন। এতে সময় এবং কিছুটা অর্থেরও সাশ্রয় হয়। কিন্তু সঠিক তথ্য আপলোড না করলে কোনো কোনো সময়ে নতুন চশমায় সমস্যা হয়।

কন্টাক্ট লেন্স না চশমা কোনটা ভালো?
চশমা এবং কন্টাক্ট লেন্স দুটোরই কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে। অনেকেই কন্টাক্ট লেন্সে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। তবে কন্টাক্ট লেন্স 8 থেকে 10 ঘণ্টার বেশী একটানা পরে থাকা উচিৎ নয়। কন্টাক্ট লেন্সের রক্ষণাবেক্ষণ ও আনুষঙ্গিক খরচ চশমার চাইতে বেশী।

বাড়িতে অফিসে কিম্বা পার্টিতে আলাদা আলাদা চশমা পরতে পারি?
একই পাওয়ারের একাধিক চশমা নানা সময়ে ব্যবহার করলে সমস্যা হতে পারে। চশমাটা adjust হতে কিছুটা সময় লাগে। এছাড়া এতে দৃষ্টির অস্বাচ্ছন্দ, মাথাব্যথা আপনার কাজের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এজন্য একটি চশমাই পরে থাকা ভালো। অন্য চশমাটিকে standby হিসাবে রাখুন।

রেডিমেড রিডিং-গ্লাস বা পড়বার চশমা কি ক্ষতিকর?
অনেকেই চালশের জন্য দোকান থেকে রেডিমেড রিডিং-গ্লাস কিনে ব্যবহার করেন। এতে অবশ্যই চোখের ক্ষতি হয়। চালশের জন্য বিভিন্ন বয়সে আলাদা আলাদা পাওয়ার লাগে। এছাড়া দূরের পাওয়ার থাকলে রেডিমেড রিডিং-গ্লাসে ভালোভাবে পড়াশুনা কার যায়না।

অন্য লোকের চশমা পরা কি খারাপ?
কখনোই অন্যের চশমা পরা উচিৎ নয়। দুজনের চোখের পাওয়ার, PD, Axis ইত্যাদি একই নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দেখতে অসুবিধা, চোখ ও মাথায় ব্যাথা, বমির ভাব হওয়াই স্বাভাবিক। অন্যের চোখে ইনফেকশন থাকলে সেটি আপনার চোখেও সংক্রামিত হতে পারে।

ডা. পূর্ণেন্দু বিকাশ সরকার

Facebook Comments
error: Content is protected !!