পরিবারের অমতে ৮ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করে উদ্যোক্তা!

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

আঁখি সরকার মনি, জন্ম ও বেড়ে ওঠা রংপুর জেলার পীরগঞ্জে। এই বছর তিনি রংপুর সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন। এখন রংপুর শহরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পরিবারে বাবা-মাসহ তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে আঁখি তৃতীয়। বড় দুই বোনের খুব দ্রুত বিয়ে হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার পাশাপাশি নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আঁখি।

আঁখি চিন্তা করেন উদ্যোক্তা হওয়ার। স্বাধীন জীবনযাপন ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে মায়ের দেওয়া ৮ হাজার টাকা দিয়ে ধীরে ধীরে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে নেমে পড়েন তিনি। ব্যবসার শুরুটা ছিল অফলাইনে। রমজান মাসে রংপুরের তাঁতের ও বেনারসি শাড়ি দিয়ে পরিবার, প্রতিবেশী ও বন্ধু মহলে বিক্রির মাধ্যমেই ছিল অল্প বয়সী আঁখির ব্যবসার হাতেখড়ি।

 

 

আঁখি বলেন, ‘শুরুতে যখন ব্যবসা করি, তখন এ সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। অপর দিকে বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করায় আত্বীয়স্বজন ও কাছের মানুষগুলো দিনরাত কথা শুনাত। মেয়ে হয়ে জন্মেছি পড়াশুনা করছি এটাই বেশি। মেয়েদের আবার ব্যবসা কিসের? অনেক সময় হতাশায় পড়ে যেতাম। মেসে থেকে গোপনে ব্যবসা করার চেষ্টা করতাম।

পরবর্তী সময়ে ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) জয়েনিংয়ের পর অনেক মেয়ের পোস্ট আর লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হই’। ‘উই থেকে পরিচয় হয় বাটিক রানী ইশরাত জাহান রিপা আপুর সঙ্গে। রিপা আপুর সহযোগিতায় কুমিল্লার মোম বাটিক ও খাদি গজ কাপড় পাইকারিতে কিনে রংপুরে বিক্রি করি।

পরবর্তী সময়ে ‘আঁখিস অ্যালিগেন্ট ফ্যাশন’ নামে নিজের ফেসবুক পেজ ওপেনিংয়ের মাধ্যমে শুরু হয় ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়ানোর নতুন যাত্রা। তারপর থেকে মানুষের কথা আর কানে নেইনি। পরিবার থেকে মায়ের সাপোর্টে ও ধৈর্যই ছিল আমার এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন’, বলেন তিনি।

 

আঁখি আরও বলেন, ‘উত্তর বঙ্গের গ্রাম এলাকায় বসবাস করি। আধুনিকতার ছোঁয়া থাকলেও অল্প বয়সে যৌতুক দিয়ে মেয়েদের বিয়ে এখানে খুব চেনা ঘটনা। আর মেয়েদের ২০ এর উপরে বয়স হলেতো কথাই নেই। এ যেন কুড়িতেই বুড়ির সেই মধ্যযুগীয় প্রভাবের প্রতিফলন। নিজে স্বাবলম্বী হলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারব।

সামাজিক এই বে-আইনি প্রথা না মেনে নিজে কিছু করব, সেই লক্ষ্য নিয়ে নিজের কাজ প্রতিদিন নিয়মিত করি । আমার এলাকার পণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ও অন্য জেলার পণ্য আমার এলাকায় পরিচিত করতে ছুটতে হয় জেলায় জেলায়। পোশাকে নতুনত্ব পেয়ে ক্রেতারাও খুশি থাকেন। নিজ জেলা ছাড়াও অন্য জেলার পণ্যের কালেকশনের মাধ্যমে আমার পেজে ক্রেতাদের বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

আট হাজার টাকার মূলধন পাঁচ মাসের ব্যবধানে এখন উত্তোরত্তর বাড়ছে। বাবা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পর আঁখি স্বপ্ন দেখেন নিজের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার। স্নাতক শেষ করার পর তাকে যেন বেকার বা অন্যের উপর নির্ভর করতে না হয়, সে জন্য ব্যবসাকে আপন করে নিয়েছেন তিনি। মেয়েদের দিয়েও সম্ভব এই কথাটি বিশ্বাস করেই আঁখির আগামীর পথচলা বলে জানান আঁখি।

Facebook Comments
error: Content is protected !!