কথায় বলে, চেষ্টা না-থাকলে ভাগ্যও মুখ ফিরিয়ে থাকে। শশী কিরণ শেট্টির মনে ছিল অদম্য ইচ্ছে। জেদ। সেই জেদই তাঁকে ২৫ হাজার টাকার মালিক থেকে আজ ৩ হাজার কোটি টাকার ধনকুবের তৈরি করেছে। রাজেশ খান্নার মুম্বাইয়ের বিলাসবহুল বাংলো আশীর্বাদ কিনেছেন আগেই।
এবার সেই বাংলো ভেঙে বহুতল তৈরির পরিকল্পনা করছেন শশী। কিন্তু আজ শশী যত সহজে মুম্বাইয়ের বাণিজ্য-দুনিয়ায় বিরাজ করছেন, এই সম্পত্তির মালিক হওয়ার পথটা ততটাই কঠিন ছিল। পারিবারিক ব্যবসা যখন বন্ধ হয় তখন শশী ২২ বয়সের যুবক। অনিশ্চিত ভবিষ্যত আর একরাশ স্বপ্ন সঙ্গী করে পাড়ি দিলেন মুম্বাই। শুরু করলেন চাকরির আবেদন।
একের পর এক জায়গায় না শুনতে শুনতে যখন ক্লান্ত, তখন ঘুরতে ঘুরতে একদিন পৌঁছালেন মুম্বাইয়ের বন্দরে। দৈত্যাকার জাহাজগুলি দেখে স্বপ্নের জালটা ফের বোনা শুরু করলেন। মনে মনে ঠিক করলেন, এখানেই কিছু একটা করবেন। বন্দরেই একটি ছোট কোম্পানিতে অল্প বেতনের কাজ নিলেন। শুরু হল চাকরি-জীবন।
কিন্তু শশী কিরণ শেট্টি অল্পে সন্তুষ্ট থাকার পাত্র ছিলেন না। তাই ছোট সংস্থাতে কাজ করতে করতেই বড় স্বপ্নের ঘর ঘোছানো শুরু করলেন। কোনাে ক্ষেত্রে উন্নতিতে অন্যতম হাতিয়ার হল জনসংযোগ। শশী তাই প্রথমে বাড়াতে লাগলেন জনসংযোগ।
বিভিন্ন জাহাজের ক্যাপ্টেন, ম্যানেজার, বন্দরের অন্যান্য কর্মীর সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ শুরু করলেন। বুঝে নিতে লাগলেন কীভাবে ব্যবসার খুঁটিনাটি। এই করতেই কেটে গেল ৪ বছর। হাল ছাড়েননি। বেতন থেকে বাঁচিয়ে জমালেন ২৫ হাজার টাকা। সেই টাকা নিয়েই শুরু করলেন লজিস্টিক ব্যবসা।
মুম্বাইয়ের ডিমেলো রোডে ব্যাপার ভবনে একচিলতে অফিস তৈরি করলেন। কর্মী সংখ্যা ৪ জন। আয় একটু বাড়তে কিছু ট্রাক ভাড়া নিলেন মালপত্র পাঠানোর জন্য। কয়েকটি শিপিং কোম্পানি শশীর সঙ্গে চুক্তি করল। ট্রান্স ইন্ডিয়া সার্ভিসেস নামে একটি কম মূলধনের লজিস্টিক সংস্থা তৈরি করলেন।
ব্যবসা থেকে যা লাভ হত, কর্মীদের মাইনে ও নিজের কাছে যৎ সামান্য রেখে পুরোটাই ব্যবসার মালপত্র কেনার জন্য ব্যয় করতেন। পৈত্রিক ব্যবসা ডুবে যাওয়া থেকে শশী শিক্ষা নিয়েছিলেন, লগ্নির বিষয়ে খুঁটিনাটি জ্ঞান থাকলে বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ব্যবসা একটু বড় হতেই ফাইনান্স বিশেষজ্ঞদের নিজের সংস্থায় নিয়োগ করলেন।
ছোটখাটো লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্তই নিতেন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরাই। সেই শুরু। ধীরে ধীরে লাভ ঊর্ধ্বমুখী হল। ৫৬ বছর বয়সি শশী কিরণ শেট্টি বর্তমানে ৩ হাজার কোটি টাকার মালিক। অলকার্গো লজিস্টিক লিমিটেডের চেয়ারম্যান।