দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী চিনতে

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

সিদ্ধান্ত যখন আপনার, তার ব্যর্থতার দায়ভারও আপনার। ব্যর্থতার দায় কখনো আপনার দলের অধস্তনের ওপর চাপাবেন না। কিন্তু সফল হলে কৃতিত্ব আবার একা নেবেন না, কৃতিত্ব দলের সবার।  লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান

একটি গাধা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মনিবের ইচ্ছামতো খেটে মরে। দিন শেষে যে খাবার তাকে খেতে দেয়া হয় তাই তার ধরা-বাঁধা খাদ্য। একটি বাঘ তার খাদ্য নির্বাচনের স্বাধীনতা ভোগ করে। দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় নিবিড় পরিকল্পনায়। খাদ্য সংগ্রহের কাজটি সম্পন্ন হয় খুবই অল্প সময়ে।  কাজ তো সবাই-ই করে। কিন্তু আপনার কাজের ধরন নিধারণ করে – আপনি কে?

শক্তি খাটিয়ে কাজ না করে, বুদ্ধি খাটিয়ে করুন। একজন ভালো ব্যবস্থাপক বাঘের মতো। ভালো ব্যবস্থাপক হতে যে দশটি কাজ করা সম্পূর্ণ নিষেধ:

এক. অধস্তনদের কাজ করতে গিয়ে অফিসে গাধা-খাটুনি খাটবেন না। আপনাকে গাধা-খাটুনি খাটার জন্য রাখা হয়নি। আপনার দলকে পরিচালনা করুন। কাজ করানোই আপনার কাজ এখন। নিজের কাজের সীমানা সম্পর্কে অসচেতন হওয়া চলবে না।

দুই. গুরুত্বপূর্ণ কাজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত (কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে) কখনো দলের অধস্তন-এর কাছে ছাড়বেন না। গণতান্ত্রিকভাবে সবার মতামত নেবেন কিন্তু সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার। দলের ওপর এই কর্তত্ব প্রতিষ্ঠায় আপনার ব্যক্তিত্বের ভূমিকা বিশাল। দলের সদস্যদের সাথে খুব কাছ থেকে মিশুন কিন্তু আপনার অবস্থানের দূরত্ব বজায় রাখতে ভুলবেন না। আপনার কাজ আর বক্তব্যই এই অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করবে। যেমন – আলাপ করতে করতে আপনার দলের কেউ যদি অন্যদলের কারো সমালোচনা করে, উৎসাহ দেবেন না। তেমনি আপনিও তাদের সামনে আপনার অন্যান্য সহকর্মীদের সমালোচনা থেকে বিরত থাকুন।

তিন. সিদ্ধান্ত যখন আপনার, তার ব্যর্থতার দায়ভারও আপনার। ব্যার্থতার দায় কখনো আপনার দলের অধস্তনের ওপর চাপাবেন না। কিন্তু সফল হলে কৃতিত্ব আবার একা নেবেন না, কৃতিত্ব দলের সবার।

চার. আপনি একজন ভালো ব্যবস্থাপক। আপনি একজন ভালো নেতা। তার মানে তিনটি বিষয় ভোলা যাবে না – ক. কাজ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান, খ. ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা গ. দায়িত্বপরায়ণতা

পাঁচ. কখনো মনে করবেন না যে আপনি সব জানেন। তার মানে এই নয় যে, আপনার দলের কাছে তুলে ধরবেন যে, আপনি কিছুই জানেন না। জানার আগ্রহ হারালে চলবে না আবার দলের কাছে আস্থা হারালেও চলবে না।

ছয়. দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারা কোন ভালো গুন নয়, যদি সে সিদ্ধান্তর ফলাফল ইতিবাচক না হয়। সুতরাং হুটহাট দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন না। সময় নিন, যাতে বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না হয়। এতে দল ও প্রতিষ্ঠান আপনার ওপর আস্থা হারাবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত ভুল হলে তা পরিবর্তনে বিলম্ব করবেন না।

সাত. আপনি নিজেই একজন চলমান উদাহরণ। আপনার কথা এবং কাজের সাথে মিল থাকা চাই। যে আইন সবাইকে মেনে চলতে বলেন সে আইন আপনি নিজেই ভাঙতে পারেন না। মনে রাখবেন, আপনার অসুসারীরা আপনাকে অনুসরণ করেই চলেছে।

আট. দুর্যোগ মোকাবিলা করতে ঘাবড়ে গেলেও, কোনভাবেই দলকে বুঝতে দেয়া যাবে না। আপনি ব্যবস্থাপক, আপনি একটি দলের অভিভাবক। আপনার আচরণ তেমনটি হওয়া চাই। এতে প্রতিষ্ঠানও আপনার ওপর ভরসা করতে পারবে।

নয়. প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকতা এবং আপনার বিভাগের মধ্যে আপনি একজন সেতু বন্ধনের ভূমিকায়। সব ক্ষেত্রে সরল-সহজ ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন না। প্রত্যেকটা অবস্থায় আপনার ভুমিকা সম্পর্কে আগে সচেতন হোন। তারপর যা প্রয়োজন করুন। চোখ-কান বন্ধ করে পথ চলা যাবে না। কৌশল না বুঝলে বিপদ।

দশ. অফিস রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়া যাবে না। আপনার চারপাশে যাদের দেখতে পাচ্ছেন তারা সবাই আপনার শুভাকাঙ্খী নন। সতর্ক হোন। কাউকে ফাঁদে ফেলার দরকার নেই। কিন্তু ফাঁদ থেকে বাঁচার কৌশল আপনাকে জানতেই হবে।

Facebook Comments
error: Content is protected !!