বিজ্ঞান বলে বয়স ১৮ বছর হয়ে গেলেই মানুষ আর লম্বা হয় না। কিন্তু মানবদেহ জীবনভরই উচ্চতা বাড়ানোর জন্য দায়ী হরমোন নিঃসরণ করতে থাকে। আর এই হরমোনই আমাদের উচ্চতা বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে। পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে এই হরমোন নিঃসরিত হয়। বলা হয়ে থাকে কেউ যদি নিয়মিতভাবে একটি সুস্থ্য ও সক্রিয় জীবন-যাপন করতে পারেন তাহলে তার উচ্চতা বাড়ানো সম্ভব। শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। এমন বিশেষ কিছু খাবার আছে যেগুলো উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক। আসুনে জেনে নেওয়া যাক।
১. শীম
শীমে আছে প্রচুর ভিটামিন এবং প্রোটিন যা আপনার উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভুমিকা পালন করে। শীমে থাকা খনিজ উপাদান টিস্যু এবং মাংসপেশি গঠনে কাজ করে। যা স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতা বাড়ায়।
২. ডাল বা মটরশুটি
এই জাতীয় খাদ্য নানা ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টিতে সমৃদ্ধ যা উচ্চতা বাড়ায়। এছাড়া মটরদানা জাতীয় খাদ্যে কয়েকটি উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোনও আছে।
৩. ব্রোকলি
এতে আছে উচ্চহারে ভিটামিন সি, আঁশ এবং আয়রন। এটি দেহের কার্যক্রম ঠিক রাখতে এবং দৈহিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোনের উদ্দীপনা বাড়াতে সহায়ক।
৪. শালগম
এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পুষ্টি এবং খাদ্য আঁশ। এটি আমাদের দেহের বৃদ্ধির জন্য দায়ী হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে।
৫. গরুর দুধ
গরুর দুধে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের উন্নয়ন ও হাড় শক্তিশালীকরণে কাজে লাগে। গরুর দুধে থাকা ভিটামিন এ দেহের ক্যালসিয়াম সংরক্ষণেও কাজ করে এবং এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে সহায়তা করে। ক্যালসিয়াম প্রাকৃতিকভাবে উচ্চতা বাড়ানোর সহায়ক উপাদানগুলোর একটি।
৬. ফল
মাল্টা, পেপে, আম, এপ্রিকোট এবং প্যাশন ফ্রুটে আছে ভিটামিন, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ফোলেট। এর সবগুলো উপাদান হাড়ের বৃদ্ধি এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতেও কাজ করে।
৭. তালের গুড়+দুধ
খালি পেটে এই মিশ্রণটি খেলে দুর্দান্ত ফল পাওয়া যায়। দুধের সঙ্গে তালের গুড় মিশিয়ে খালি পেটে দুধের কার্যকারিতা দশগুন বৃদ্ধি পায়। এই মিশ্রণটি খেলে সবগুলো পুষ্টি উপাদান সহজেই শুষে নিতে পারে আমাদের দেহ।
৮. কালো তিল+কাজুবাদাম+অশ্বগন্ধা+দুধ
অশ্বগন্ধা এইচজিএইচ হরমোন নিঃসরণের হার ঠিক রাখে। আর এ কারণেই এটি উচ্চতা বৃদ্ধিতে এতটা কার্যকর। এটি হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং ঘনত্ব বাড়াতেও কার্যকর। কালো তিলে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বি ও আয়রন। এটি ক্যালসিয়ামেরও ভালো উৎস। হাড়ের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক এসব উপাদান। কাজুবাদামে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং পটাশিয়াম যেগুলো হাড়ের বৃদ্ধিতে জরুরি খনিজ উপাদান।
আর এই সবগুলো উপাদান দুধের সঙ্গে মিলে উচ্চতা বাড়ায়। প্রতিদিন রাতে দুধের সঙ্গে এক চামচ অশ্বগন্ধা, কাজুবাদাম এবং কালো তিলের পাউডার মিশিয়ে পান করুন।
৯. সয়া বিন
সয়া বিনে যে প্রোটিন থাকে তা হাড় এবং টিস্যুর ঘনত্ব বাড়ায়। যা তাদের বৃদ্ধির জন্যও জরুরি। নিয়মিতভাবে খেলে আপনার হাড়ের আকার ভালো থাকবে এবং স্বাস্থ্যকর উন্নয়ন হবে। প্রতিদিন অন্তত ৫০ গ্রাম সয়া বিন খেতে হবে।
১০. বাদাম
বাদামও উচ্চ পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। এতে যে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামাইনো এসিড থাকে তা দেহের টিস্যু মেরামত এবং নতুন হাড় ও মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে উচ্চতাও বাড়ে।
১১. সবুজ পাতাবহুল শাক-সবজি
অসংখ্য উপায়ে সবুজ পাতাবহুল শাক-সবজি আমাদের উপকারে আসে। এতে থাকে প্রচুর খাদ্য আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এছাড়া দেহের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণে উদ্দীপনাও যোগায় তা।
১২. গাজর
এই খাবারটি ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ। হাড়ে ক্যালসিয়াম সংরক্ষণ এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে উৎসাহ যোগায় এসব উপাদান। প্রতিদিন অন্তত ৩টি করে গাজর খেলে দেহের উচ্চতা বাড়ে।
১৩. পূর্ণ শস্য
দেহ থেকে বর্জ্য নিঃসরণে সহায়ক পূর্ণ শস্যজাতীয় খাদ্য। যার ফলে আমরা যা কিছুই খাই না কেন তার কার্যকারিতা বেড়ে যায়। এই জাতীয় খাদ্য ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। এছাড়া এতে আছে ক্যালোরি যা বয়ঃসন্ধিকালে উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক।
১৪. ডিম
ডিম উচ্চতা বাড়াতে সবচেয়ে কার্যকর জনপ্রিয় খাদ্য। ডিমে আছে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং রিবোফ্ল্যাবিন। ডিমে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন উপাদান হাড়ের উন্নয়ন ও হাড়কে শক্তিশালীকরণে কাজ করে।
১৫. কুমড়ো বীজ
এরা ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ। যা হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য জরুরি। এছাড়া এতে আছে অ্যামাইনো এসিড যা উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।