তথ্যপ্রযুক্তি দ্রুত বদলায়। নতুন নতুন প্রোগ্রাম তৈরি করতে প্রযুক্তির পরিবর্তন আর যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। প্রোগ্রাম লেখার যেসব ভাষা রয়েছে সেগুলোও কি বদলে যায়? সব প্রোগ্রামিং ভাষার নতুন সংস্করণ আসে নিয়মিত। তবে জনপ্রিয়তা সমান নয়। এ সময়ের উপযোগী প্রোগ্রাম লেখার জনপ্রিয় পাঁচটি প্রোগ্রামিং ভাষার কথা জানাচ্ছেন তামিম শাহরিয়ার
সি (C): আজ থেকে ৪৬ বছর আগে সি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন ডেনিস রিচি, যা খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। সি খুব শক্তিশালী প্রোগ্রামিং ভাষা। সি দিয়ে অনেক ধরনের কাজ করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সি শেখা একরকম বাধ্যতামূলকই ধরা যায়।
বর্তমানে সফটওয়্যারশিল্পে সি ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পাইলার তৈরি, সিস্টেম প্রোগ্রামিং ও আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) বিভিন্ন প্রোগ্রাম তৈরিতে। কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কিংবা কম্পিউটারবিজ্ঞানে উৎসাহী সবারই সি শেখা উচিত। সি-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি আরেকটি প্রোগ্রামিং ভাষা সি প্লাস প্লাসও (C++) বেশ জনপ্রিয়।
জাভা (Java): ১৯৯৫ সালে জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন জেমস গসলিং। এটি একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। ডেস্কটপ ও ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরিতে জাভা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর অন্যতম কারণ ছিল, জাভা দিয়ে তৈরি সফটওয়্যার নানা রকম অপারেটিং সিস্টেমে চালানো যেত। শুরুর দিকে জাভা বেশ ধীরগতির প্রোগ্রামিং ভাষা বলে বিবেচিত হলেও ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এখন এটি অত্যন্ত কার্যকর ও শক্তিশালী এক ভাষা হিসেবে জনপ্রিয়। এন্টারপ্রাইজ অ্যাপ্লিকেশন তৈরিতে জাভা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নেটিভ সফটওয়্যার (নির্দিষ্ট অপারেটিং সিস্টেম বা যন্ত্রের জন্য তৈরি প্রোগ্রাম) তৈরি করতেও জাভাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
জাভাস্ক্রিপ্ট (JavaScript): জাভাস্ক্রিপ্ট হচ্ছে ইন্টারনেটের প্রোগ্রামিং ভাষা। শুরুতে এটি ব্রাউজারের জন্য তৈরি করা হলেও এখন ফ্রন্টএন্ড ও ব্যাকএন্ড—উভয় ক্ষেত্রেই বহুল ব্যবহৃত। ১৯৯৫ সালে ব্র্যানডন এইখের ডিজাইন করা এই প্রোগ্রামিং ভাষাটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন তৈরি অনেক সহজ করে দিয়েছে। জাভাস্ক্রিপ্ট দিয়ে ফাংশনাল প্রোগ্রামিং, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংসহ বিভিন্নভাবে প্রোগ্রাম তৈরি করা যায়। আবার একেক সময়ে এই ভাষার একেক ধারার ফ্রেমওয়ার্ক সফটওয়্যার প্রোগ্রামারদের জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই ভাষার ওপর নির্মিত হাজারখানেক ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে জেকুয়েরি দীর্ঘদিন জনপ্রিয় ছিল। অ্যাঙ্গুলার জেএস, রিয়েক্ট জেএস, ভুজেস ইত্যাদি ফ্রেমওয়ার্ক সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়। আবার ব্যাকএন্ডেও সার্ভার সাইড জাভাস্ক্রিপ্ট (যেমন নোডজেএস) জনপ্রিয় হয়েছে। এমনকি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির অনেক ফ্রেমওয়ার্কেও জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পাইথন (Python): গুইডো ফন রুজাম ১৯৯১ সালে পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। পাইথন একটি অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা হলেও সি++ কিংবা জাভার তুলনায় বেশ সহজ। সুন্দর, সহজবোধ্য ও সাবলীল ভাষা হিসেবে পাইথনের সুনাম রয়েছে। এটি শেখা যেহেতু তুলনামূলক সহজ, তাই বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানেই প্রথম প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে পাইথন শেখানো হয়। এটি ওয়েবের জগতে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি মেশিন লার্নিং ও ডেটা অ্যানালাইসিসের জন্যও বহুল ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান—সব জায়গাতেই পাইথনের ব্যবহার বাড়ছে।
পিএইচপি (PHP): ১৯৯৫ সালে রাসমুস লেরড্রফ পিএইচপি প্রোগ্রামিং ভাষা তৈরি করেন। এ ভাষাটি তৈরি করা হয়েছে সি প্রোগ্রামিং ভাষা ব্যবহার করে। ওয়েব প্রোগ্রামিং অনেকটাই সহজ করে দেয় পিএইচপি। তাই এ ভাষাটি নিজে যেমন জনপ্রিয়তা অর্জন করে, তেমনি ওয়েব প্রোগ্রামিংকে আরও বেশিসংখ্যক মানুষের কাছে নিয়ে যায়। ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, দ্রুপাল-এর মতো জনপ্রিয় সব সফটওয়্যার পিএইচপি দিয়ে তৈরি। তাই এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, পিএইচপি হচ্ছে ওয়েবজগতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ভাষা। বর্তমানে ওয়েবের জগতে যদিও পাইথন, রুবি এবং আরও কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তারপরও পিএইচপি আরও অনেক দিন টিকে থাকবে।
আরও আছে: সি শার্প (#) বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে মাইক্রোসফটের ডট নেট ফ্রেমওয়ার্কে কাজ করার জন্য এটি অধিকাংশ সফটওয়্যার নির্মাতার প্রথম পছন্দ। এ ছাড়া বর্তমানে আরও তিনটি প্রোগ্রামিং ভাষা বেশ দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এগুলো হলো ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাকএন্ডে গুগলের তৈরি গো বা গোল্যাঙ্গ, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য কটলিন, অ্যাপলের আইওএস অ্যাপ্লিকেশন তৈরির জন্য সুইফট।
লেখক: প্রোগ্রামার, একাধিক প্রোগ্রামিং বইয়ের লেখক